অনেকেই আছেন যারা না জেনে বা ভুল করে দ্বৈত ভোটার হয়েছেন। একাধিকবার ভোটার হলে করণীয় কি সে বিষয়ে কি কোন ধারণা আছে আপনাদের? যদি আপনার দ্বৈত ভোটারের বিষয়ে ধারণা থাকে তাহলে খুবই ভালো। আর যদি না থাকে তাহলে অবশ্যই বিস্তারিত পড়ে নেয়ার অনুরোধ করবো। কারণ আমি চাই না আপনারা দ্বৈত ভোটারের ঝামেলায় পড়ে থাকেন।
ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তি প্রতিটি নাগারিকের মৌলিক অধিকার। একজন ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হলে সে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য আবেদন করতে পারে। তবে একাধিবার ভোটার হলে তার পরিনাম অনেক ভয়াবহ হতে পারে। ২০১৫ সাল থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদেরকে ভোটার করার পাশাপাশি ১৮ বছরের কম বয়স্ক ছেলে-মেয়েদেরকে Underage Voter হিসেবে নিবন্ধন করা শুরু হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার লক্ষ্যে। Underage ভোটারদের নাম ভোটার তালিকায় আসে না এবং ভোট দিতে পারে না। তারা যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায় তখন আপনা আপনিই তাদের নাম ভোটার তালিকায় চলে আসে এবং তারা ভোট দিতে পারে। কিন্ত এই বিষয়টাই অনেকে জানে না বা বোঝে না। ফলে পুনরায় আবার ভোটার হওয়ার জন্য ছবি তোলে এবং একাধিকবার ভোটার হওয়ার ঝমেলায় জড়িয়ে পড়ে।
যেসব কারণে একজন ব্যক্তি একাধিকবার ভোটার হয়ঃ-
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দেশের প্রতিটি নাগরিকের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেয়ার জন্য Underage ভোটারদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে। কিছু লোকজন আছে তারা ইতোপূর্বে Underage Voter হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছিলো। তারা তখন জানতো যে, তাদের বয়স ১৮ বছর হয়নি তাই তারা ভোটার না, শুধু জাতীয় পরিচপত্র দেয়ার জন্য তাদের ছবি তোলা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের বয়স যখন ১৮ বছর হয় তখন তারা আবার ২ নং নিবন্ধন ফরম পূরণ করে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য ছবি তোলে। ফলে কমিশনের সার্ভারে Duplicate Voter হিসেবে ধরা পড়ে।
এমন অনেক মেয়ে আছে যারা বিয়ের আগে Underage Voter হয়। এনআইডি কার্ড হাতে পাওয়ার আগেই হয়তো অনেকের বিয়ে হয়ে যায় এবং তারা শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতে থাকে। সাংসারিক কাজের চাপে অনেকেই ভুলে যায় যে সে বাবার বাড়িতে থাকার সময় ভোটার হয়েছিলো। এনআইডি কার্ডের প্রয়োজন অনুভব করা মাত্র (গর্ভবতী ভাতা প্রাপ্তি) শ্বশুর বাড়ির ঠিকানায় পুনরায় একবার ভোটার হওয়ার জন্য অফিসে কাগজপত্র দাখিল করে ভোটার হয় বা হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার হয়। কিছুদিন পরে এনআইডি নম্বর সংগ্রহের জন্য অফিস গেলে ধরা পড়ে সে দ্বৈত ভোটার বা একাধিকবার ভোটার হয়েছে।
অনেকেই লেখাপড়া বা চাকরি করার কারণে নিজ বাড়ি থেকে শত শত মাইল দুরে গিয়ে বসবাস করে থাকে। নতুন ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হলে অনেকেই অস্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হয়। এনআইডি কার্ড হাতে পাওয়ার আগেই দেখা যায় ঠিকানা পরিবর্তণ করে অন্য কোন জায়গায় চলে যেতে হয়েছে বা স্থায়ী ঠিকানায় ফিরে এসেছে বা ভোটার নিবন্ধন স্লিপ হারিয়ে ফেলেছে। এভাবে ২-৩ বছর পার করে ফেলে। যখন এনআইডি কার্ডের প্রয়োজন পড়ে তখন সে যে ঠিকানায় ভোটার হয়েছিলো সেখানে গিয়ে ঘোরাঘুরি করে এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করা অনেকটাই ঝামেলা মনে করে বিধায় স্থায়ী ঠিকানায় পুনরায় ভোটার হয়।
অনেকেই আছে যাদের চাকরির বয়স চলে গেছে। পরবর্তীতে বয়স কম দিয়ে ভোটার হয়ে চাকরির সুযোগ নেয়ার জন্য পুনরায় ভোটার হয়।
এছাড়া এমন অসংখ্য মানুষ আছে যারা না জেনে বা না বুঝে বা ভুল করে বা স্বার্থের বসবর্তী হয়ে একাধিকবার ভোটার হয়ে থাকে। কিন্ত তারা জানে না যে ভোটার করার সময় আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হয় এবং এই ছাপের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কত বার ভোটার হয়েছে তা সয়ংক্রিয়ভাবে ধরা পড়ে যায়। পূর্বে ভোটার করার সময় মাত্র ৪ আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হত। বর্তমান সময় ভোটার করার সময় ১০ আঙ্গুলেরই ছাপ নেয়া হয় এবং চোখের আইরিশ স্ক্যান করে মেইন সার্ভারে সংরক্ষণ করে রাখ হয়। আপনি যতই চালাকি করেন না কেন একাধিকবার ভোটার হতে গেলে অবশ্যই ধরা খেতে হবে।
ভুলবসত যারা একাধিকবার ভোটার হয়েই পড়েছেন তাদের জন্য করণীয়ঃ-
একাধিকবার ভোটার হলে প্রথমবারের ভোটার তথ্য বহাল থাকে পরবর্তীতে হওয়া ভোটার তথ্য অটোমেটিক ডিলিট হয়ে যায়। যতবার ভোটার হবেন ততবার ডিলিট হয়ে যাবে। তাদের ভোটার স্ট্যাটাস থাকে Duplicate Voter বা Deleted Voter হিসাবে। এই ভোটার তথ্য দিয়ে কোন কাজ করা যায় না এবং এনআইডি কার্ড আসে না। তবে কমিশনের সার্ভারে যাবতীয় তথ্যই থেকে যায় রেকর্ড হিসেবে।
আবার দেখা যায় একজন ব্যক্তি দুই বার ভোটার হয়েছে তার দুইটাই বহাল আছে এবং দুইটা এনআইডি কার্ড পেয়েছে। এমন ব্যক্তিদের উচিত প্রথমবারের ভোটার তথ্য বহাল রাখার জন্য এবং দ্বিতীয় বারে ভোটার তথ্য বাতিল করার জন্য নিজে থেকে উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে আবেদন করা। আপনি যদি আপনার নিজের ভুল নিজেই সামনে নিয়ে আসেন সেক্ষেত্রে কমিশন আপনার বিরুদ্ধে তেমন কোন নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না বরং দ্বিতীয়বারের ভোটার তথ্য বাতিল করে দেবে। অন্যথা কমিশন যখন জানতে পারবে একটা ব্যক্তি ২ বার ভোটার এবং দুইটা ভোটার তথ্যই বহাল আছে তখন মামলা নিশ্চিত ধরে রাখতে পারেন।
অনেকে আছেন যারা একাধিকবার ভোটার হয়েছেন এবং দুইটা ভোটার তথ্যই ডিলিট হয়ে গেছে। তারা সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে একটা ভোটার তথ্য বহাল রাখার জন্য আবেদন করবেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসার যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আপনার আবেদন হেড অফিসে প্রেরণ করবেন। যদি একটি ভোটার তথ্য ঠিক হয় সেটি হেড অফিস থেকে হবে। উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে গিয়ে হট্টোগোল করবেন না। ডিলেটেড ভোটার রোল ব্যাক করার কাজ উপজেলা পর্যায় থেকে হয় না, করা যায় না। সুতরাং সেখানে সময় অপচয় করে লাভ নেই। যদি পারেন ঢাকা হেড অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করবেন।
যারা একাধিকবার ভোটার হয়েছেন এবং প্রথমবারের তথ্য বহাল আছে পরে হওয়া ভোটার তথ্য ডিলিট হয়ে গেছে। তারা আপাতত নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। তবে কখনোই তৃতীয়বার ভোটার হওয়ার জন্য চিন্তাও করবেন না, করলে আপনার নামে মামলা হওয়ার সম্ভবনা ৯৯%।
একটা বিষয় মনে রাখবেন এবং অপরকে বুঝিয়ে বললবেন, একাধিবার ভোটার হওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আর এই অপরাধের কারণে জেল খাটা লাগতে পারে সাথে জরিমানা দেয়া লাগতে পারে। আপনার ভোটার তথ্যে বা ভোটার আইডি কার্ডে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করবেন তারা আপনাকে সঠিক পরামর্শ দেবেন।
একাধিকবার ভোটার হওয়ার বিষয়ে নিজে সতর্ক হোন অপরকে সতর্ক করার জন্য পোষ্টটি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।
Read: BD Pension Scheme