জাতীয় পরিচয়পত্রে অনেক সময় কিছু তথ্য ভুল থাকে, জেনে নিন এসব তথ্য সংশোধনের উপায়
সরকারি ও বেসরকারি অনেক সেবা পেতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয়। অনেকসময় জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্য সংশোধন নিয়ে অনেক রকম প্রশ্নের জন্ম নেয়। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে এরকম ২২টি প্রশ্নের উত্তর জানাবো আজ।
আপনি চাইলে অনেক সহজেই অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে নিতে পারবেন, তাহলে আসুন জেনে নেই কিভাবে আবেদন করতে হবে।
প্রথমেই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সার্ভিস পোর্টালে চলে যাবেন services.nidw.gov.bd
- উপরের ম্যানু থেকে রেজিস্টার অপশন বেচে নিন- services.nidw.gov.bd/registration
- পরবর্তি পেইজ ওপেন হলে আপনার সঠিক তথ্য দিয়ে পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করুনঃ- কিছু কথা খেয়াল রাখবেন-- প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পূরণ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। আপনার কার্ডের তথ্য ও মোবাইলে প্রাপ্ত এক্টিভেশন কোড সহকারে লগ ইন করুন। তথ্য পরিবর্তনের ফর্মে তথ্য হালনাগাদ করে সেটির প্রিন্ট নিয়ে নিন। তথ্য পরিবর্তনের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলাদি কালার স্ক্যান কপি অনলাইনে জমা দিন।
- পরবর্তি পেইজে গিয়ে আপনার এনআইডি নাম্বার/ফর্ম নাম্বার ও জন্মনিবন্ধন দিয়ে লগিন করুন।
- তারপর আপনি যেটা সংশোধন করতে চান সেটা সিলেক্ট করে সংশোধন দিন।
- প্রয়োজনীয় ফী মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকি এর মাধ্যমে জমা দিন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরম
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন নিয়ে প্রশ্নের উত্তর
১। কার্ডের তথ্য কিভাবে সংশোধন করা যায়?
- এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত উপযুক্ত দলিলাদি আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
২। কার্ডে কোনও সংশোধন করা হলে তার কি কোন রেকর্ড রাখা হবে?
- সকল সংশোধনের রেকর্ড সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
৩। ভুলক্রমে পিতা/স্বামী/মাতাকে মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হলে সংশোধনের জন্য কি কি সনদ দাখিল করতে হবে?
- জীবিত পিতা/স্বামী/মাতাকে ভুলক্রমে মৃত হিসেবে উল্লেখ করার কারণে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।
৪। অবিবাহিত হওয়ার পরেও কার্ডে পিতার নামের জায়গায় স্বামী লেখা থাকলে কীভাবে তা সংশোধন করা যাবে?
- সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আপনি বিবাহিত নন মর্মে প্রমাণাদিসহ আবেদন করতে হবে।
৫। বিয়ের পর স্বামীর নাম সংযোজনের প্রক্রিয়া কি?
- নিকাহনামা ও স্বামীর আইডি কার্ড এর ফটোকপি সংযুক্ত করে NID Registration Wing / সংশ্লিষ্ট উপজেলা / থানা / জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর আবেদন করতে হবে।
৬। বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে স্বামীর নাম বাদ দিতে হবে কীভাবে?
- বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত দলিল (তালাকনামা) সংযুক্ত করে NID Registration Wing সংশ্লিষ্ট উপজেলা / থানা / জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।
৭। বিবাহ বিচ্ছেদের পর নতুন বিবাহ করলে আগের স্বামীর নামের স্থলে বর্তমান স্বামীর নাম কীভাবে সংযুক্ত করতে পারি?
- প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের তালাকনামা ও পরবর্তী বিয়ে কাবিননামাসহ সংশোধন ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
৮। আমি আমার পেশা পরিবর্তন করতে চাই কিন্তু কীভাবে করতে পারি?
- এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিসে প্রামাণিক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। উল্লেখ্য, আইডি কার্ডে এ তথ্য মুদ্রণ করা হয় না।
৯। জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি অস্পষ্ট, ছবি পরিবর্তনে কী করা দরকার?
- এক্ষেত্রে নিজে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করতে হবে।
১০। নিজ/পিতা/স্বামী/মাতার নামের বানান সংশোধন করতে আবেদনের সাথে কি কি দলিল জমা দিতে হবে?
- এসএসসি/সমমান সনদ, জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সদন, চাকরির প্রমাণপত্র, নিকাহ্নামা, পিতা/স্বামী/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়।
১১। ডাক নাম বা অন্য নামে নিবন্ধিত হলে সংশোধনের জন্য আবেদনের সাথে কি কি দলিল জমা দিতে হবে?
- এসএসসি/সমমান সনদ, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী/ স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, ম্যাজিট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি,ওয়ারিশ সনদ,ইউনিয়ন/পৌর বা সিটি কর্পোরেশন হতে আপনার নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র।
১২। পিতা/মাতাকে ‘মৃত’ উল্লেখ করতে চাইলে কি কি সনদ দাখিল করতে হয়?
- পিতা/মাতা/স্বামী মৃত উল্লেখ করতে চাইলে মৃত সনদ দাখিল করতে হবে।
১৩। ঠিকানা কীভাবে পরিবর্তন/সংশোধন করা যায়?
- শুধুমাত্র আবাসস্থল পরিবর্তনের কারনেই ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে যে এলাকায় বসবাস করছেন সেই এলাকার উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে ফর্ম ১৩ এর মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। তবে একই ভোটার এলাকার মধ্যে পরিবর্তন বা ঠিকানার তথ্য বা বানানগত কোন ভুল থাকলে সাধারণ সংশোধনের আবেদন ফরমে আবেদন করে সংশোধন করা যাবে।
১৪। বৃদ্ধ ও অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ার পরেও নির্দিষ্ট বয়স না হওয়ায় বয়স্ক ভাতা বা অন্য কোন ভাতা সুবিধা পাচ্ছি না। জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স বাড়ালে কি ওই সকল ভাতা পাওয়া যাবে?
- জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদত্ত বয়স প্রামাণিক দলিল ব্যতীত পরিবর্তন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, প্রামাণিক দলিল তদন্ত ও পরীক্ষা করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১৫। একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের কার্ডে পিতা/মাতার নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে কীভাবে তা সংশোধন করা যায়?
- সকলের কার্ডের কপি ও সম্পর্কের বিবরণ দিয়ে NID Registration Wing/উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর পর্যাপ্ত প্রামাণিক দলিলসহ আবেদন করতে হবে।
১৬। পাশ না করেও অজ্ঞতাবশতঃ শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তদুর্দ্ধ লিখেছিলাম এখন আমার বয়স বা অন্যান্য তথ্যাদি সংশোধনের উপায় কি?
- ম্যাজিট্রেট আদালতে এস.এস.সি পাশ করেননি, ভুলক্রমে লিখেছিলেন মর্মে হলফনামা করে এর কপিসহ সংশোধনের আবেদন করলে তা সংশোধন করা যাবে।
১৭। জাতীয় পরিচয়পত্রে অন্য ব্যক্তির তথ্য চলে এসেছে। এটি কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
- ভুল তথ্যের সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত দলিল উপস্থাপন করে NID Registration Wing/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক যাচাই করার পর সঠিক পাওয়া গেলে সংশোধনের প্রক্রিয়া করা হবে।
১৮। রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত বা সংশোধনের জন্য কি করতে হয়?
- রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত বা সংশোধন করতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়কৃত ডায়াগনেস্টিক রিপোর্ট দাখিল করতে হয়।
১৯। বয়স/ জন্ম তারিখ পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া কী?
- এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। এসএসসি বা সমমানের সনদপ্রাপ্ত না হয়ে থাকলে সঠিক বয়সের পক্ষে সকল দলিল উপস্থাপনপূর্বক আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনে ডাক্তারী পরীক্ষা সাপেক্ষে সঠিক নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।
২০। স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে চাই, কীভাবে করতে পারি?
- নতুন স্বাক্ষর এর নমুনাসহ গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। তবে স্বাক্ষর একবারই পরিবর্তন করা যাবে।
২১। জন্ম তারিখ যথাযথভাবে লেখা হয়নি, আমার কাছে প্রামাণিক কোন দলিল নেই, কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
- সংশ্লিষ্ট উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২২। একটি কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়?
- এক তথ্য শুধুমাত্র একবার সংশোধন করা যাবে। তবে যুক্তিযুক্ত না হলে কোন সংশোধন গ্রহণযোগ্য হবে না।