Photo: Sylhet City Corporation |
বিভিন্ন প্রয়োজনের আমাদের লাগতে পারে নাগরিকত্বের সনদপত্র। সিটি করপোরেশন এলাকায় নাগরিকত্বের সনদপত্র দিয়ে থাকেন ওয়ার্ড কমিশনার। অনেক কাজে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদের সাথে নাগরিকত্বের সনদপত্রও প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ সনদ লাগতে পারে। কেননা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্তমানে নির্বাচিত মেয়র ও ওয়ার্ড কমিশনাররা না থাকায় এ সনদ বর্তমানে ওয়ার্ড সচিবের সুপারিশক্রমে প্রদান করেন সিটি করপোরেশনের সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা। এ সনদ কীভাবে করাবেন তা নিয়ে আজকের আলোচনা।
এক কপি পাসপোর্টের সাইজের ছবি, নিজেদের বাসা হলে হোল্ডিং ট্যাক্সের ফটোকপি, ভাড়া বাসা হলে ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি, জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তার ফটোকপি নিয়ে চলে যান স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের। সেখানে গিয়ে নাগরিকত্বের সনদের জন্য প্রয়োজনীয় আবেদনপত্র পূরণ করে সঙ্গে নেয়া অন্যান্য নথি ও ছবির সাথে জমা দিন। সিটি করপোরেশনে যাতায়াতের জন্য কিছু টাকাপয়সা দিতে হবে তাদের হাতে। সাধারণত দুই কর্মদিবসের মধ্যে তারা নগরভবন থেকে স্বাক্ষর করিয়ে এনে আপনার হাতে তুলে দেবে নাগরিকত্বের সনদ। সনদ গ্রহণের সময় আরো কিছু টাকা চাইবে তারা। পুরো প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা খরচ হতে পারে। কোনো সরকারি ফি নেই এ কাজের জন্য।
এবার আসি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রসঙ্গে। বয়স ১৮ বছর বা তার উর্ধ্বে হলেই কেবলমাত্র আপনি জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে পারবেন। মূলত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটার আইডি ও ন্যাশনাল আইডি করার হিড়িক পড়ে। তখন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যাম্প করে করে এ সেবাগুলো প্রদান করে থাকেন। কিন্তু আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যাদের বয়স বেশ আগেই ১৮ বছর হয়ে গেলেও বিবিধ কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র করান নি এবং ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হন নি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন বলে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা। অর্থাৎ, নির্বাচনের আগে আগে দেশের বাইরে থাকায় অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে পারেন নি। অনেকে আবার দেশে থেকেও কাজটি করাতে পারেন নি। যেমন- আমি। বাসায় ভোটার নিবন্ধন কর্মী আসে নি। আমিও গাফিলতি করে স্থানীয় বিদ্যালয়ে গিয়ে নিবন্ধন ফরম পূরণ করি নি। এখন এ অবস্থায় জাতীয় পরিচয়পত্র করতে হলে প্রথমেই জেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। ঢাকা মহানগরীর স্থানীয় নির্বাচন অফিস হলো ৬৭, পশ্চিম আগারগাঁওয়ে। আবারো বলছি, এ কাজের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে যেতে হবে না, যেতে হবে জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে। ওখানে গেলে ওরা প্রথমেই জানতে চাইবে কেন আপনি নির্বাচনের আগে ভোটার হন নি। তখন আপনি কারণ জানাবেন যে দেশের বাইরে ছিলেন বা বাসায় ভোটার নিবন্ধন কর্মী আসেন নি এরকম। অতঃপর তারা আপনাকে ফরম-২ দিবে। আরেকটি ফরম (ফরম-১১) নিতে হবে সামনের ফটোকপির দোকান থেকে ৪-৫ টাকা দিয়ে। পূরণকৃত ফরমের সাথে কি কি কাগজের ফটোকপি লাগবে তাও তারা একটি কাগজে লিখে দেবে। সুবিধার্থে আমি বলে দিই এখানে।
১। পাসপোর্টের ফটোকপি
২। জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি
৩। সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্বের সনদপত্রের ফটোকপি
৪। হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদের (নিজেদের বাসা হলে) ফটোকপি
৫। বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের ফটোকপি
৬। এসএসসি সনদের ফটোকপি
৭। সনাক্তকারীর (মা/বাব/স্বামী/স্ত্রী) জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
প্রতিটি কপি অবশ্যই প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়িত করাতে হবে।
এসব কাগজপত্র প্রথমবার যাওয়ার সময়েই নিয়ে যেতে পারেন। তাহলে অফিসে বসেই ফরমগুলো পূরণ করে জমা দিয়ে আসতে পারবেন। তবে কাগজগুলো তারা ঐদিন জমা নাও নিতে পারে। ৭ দিন পরে ছবি তোলার একটি তারিখ দেবে। ঐ দিন এসব কাগজ নিয়ে আপনাকে হাজির হতে হবে অফিসে। তারা কাগজপত্র জমা নিয়ে আপনার ছবি তুলে একটি ডেলিভারি স্লিপ ধরিয়ে দেবে আপনাকে। এর এক মাস পরে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় অর্থাৎ আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের ৭ম তলায় গিয়ে স্লিপ দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। উল্লেখ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না। জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সারা বছর কার্যকর থাকে না। বিভিন্ন কাজে তারা অফিস বন্ধ করে অন্যান্য জেলা-উপজেলায় চলে যায়। তাই সেখানে গিয়ে কয়েকবার খোঁজ-খবর নিতে হতে পারে।